ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গেল দুই মাসে তিন দফায় চিনির দাম কেজিতে ৩৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবু বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। ক্রেতার কাছে চিনি এখনও দুর্লভ। বেশিরভাগ দোকানে চিনি মিলছে না। ফলে ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে; ছুটছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। দু-এক দোকানে চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মালিবাগ, মহাখালী কাঁচাবাজার, তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৭৫ টাকা ছিল। যদিও সে সময় এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছিল। পরে চিনি আমদানি ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে সরকার ২২ সেপ্টেম্বর দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনি ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে। দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৬ অক্টোবর কেজিতে আরও ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৯৫ টাকা করা হয়েছে। দুই দফায় দাম বাড়ালেও বাজারে চিনির সরবরাহ কমেছে। চিনির ঘাটতি প্রকট হয়ে এক পর্যায়ে বাজার থেকে চিনি প্রায় ‘উধাও’ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের চাপে গত ১৭ নভেম্বর থেকে চিনির দাম আরও এক দফা বাড়ায় সরকার। এ দফায় কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৮ টাকা। আর খোলা চিনির কেজি ধরা হয় ১০২ টাকা। সেই হিসাবে গত দুই মাসে সরকার চিনির কেজিতে ৩৩ টাকা দাম বাড়িয়েছে। এর পরও বাজারে চিনির সংকট চলছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক ক্রেতা বলেন, দাম বাড়ানোর পরও ব্যবসায়ীরা চিনি নিয়ে কারসাজি করছেন। চিনি উৎপাদন হয় না- বিষয়টি এমন নয়। তাঁরা কৌশল করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর চিনির উৎপাদন পরিস্থিতি তদারকি করা।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোম্পানিগুলো চিনি সরবরাহ করছে না। দু-একটা কোম্পানি চিনি দিলেও তারা প্যাকেটে লেখা দাম নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। সে ক্ষেত্রে বিক্রি করতে হয় প্যাকেটে লেখা দরের চেয়ে বেশি দামে। আবার বেশি দামে বিক্রি করলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জরিমানা করে। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা চিনি রাখছেন না।
গত রোববার হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া ও নাখালপাড়ায় খোঁজ করে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যায়নি। কিছু জায়গা খোলা চিনি আগের মতোই ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর কাছে পাঁচ হাজার টন চাইলে দিচ্ছে এক হাজার টন। এভাবেই বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা ধীর ধীরে তীব্র হচ্ছে। ১০০ জন পাইকার খুঁজলে হয়তো পাঁচ থেকে ১০ জনের কাছে চিনি পাওয়া যেতে পারে।’
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাজারে আমাদের চিনির সরবরাহ চলমান। এখন গ্যাস সংকট কিছুটা কমেছে, তবে আমদানিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। কারণ এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বড় অঙ্কের এলসি নিতে পারছে না কিছু কিছু ব্যাংক। ফলে ভাগ ভাগ করে কয়েকটি ব্যাংকে এলসি খুলতে হচ্ছে।’
চিনির সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেঘনা গ্রুপে এমন কোনো শর্ত নেই। আমরা ডিলারের মাধ্যমে চিনি বিক্রি করি। ‘
বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে চিনি নাই কেন? দাম বেশি কেন- এসব ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। সরকারই বলুক। তবে এটা বলতে পারি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট অনেক দিন ধরেই আছে। এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এর মধ্যে এখন ডলার নিয়ে সমস্যা। ব্যাংকে এলসি নিচ্ছে না। আমদানিতে বিঘ্ন ঘটছে। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ধাপে প্রতি কেজি চিনিতে আমদানি শুল্ক্ক দিতে হচ্ছে ৩২ টাকা।’